News

Title : বিপিপিএ’র কর্মশালায় বক্তারা : সরকারি ক্রয় বিষয়ক তথ্যের বড় উৎস ক্রয় বাতায়ন
Description :

'সরকারি ক্রয় বাতায়ন' বা সিটিজেন পোর্টাল থেকে এখন সরকারি ক্রয়ের বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছেন নাগরিকরা।  সিটিজেন পোর্টালটিতে শুধু জাতীয় পর্যায়ের নয়, দেশের সব জেলার তথ্য রয়েছে। কোথায় কী ধরনের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, কোন কোন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বা হবে, কত টাকার ক্রয় চুক্তি হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, সরকারি ক্রয়ের প্রধান সূচকগুলোর (কেপিআই) অবস্থা কী ইত্যাদি নানা তথ্য দেখার সুযোগ রয়েছে এতে। সরকারি ক্রয় বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকদের জন্য তথ্য-উপাত্তের বড় একটি উৎস হতে পারে সরকারি ক্রয় বাতায়ন।

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে 'সরকারি ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা' শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেনপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এই কর্মশালার আয়োজন করে। সরকারি ক্রয় বাতায়ন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বিপিপিএ’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিনেটের ব্যবস্থাপনায় এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্টের (ডাইম্যাপ) প্রকল্পের আওতায় বিপিপিএ ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।   

বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: শোহেলের রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইএমইডির সচিব জনাব আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিপিপিএর পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মির্জা আশফাকুর রহমান।  ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক ও টিম লিড জনাব এম শাহাদাৎ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন। সরকারি ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা ও সরকারি ক্রয় বাতায়ন বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেন ডিনেটের ডাটা এনালিটিকস এক্সপার্ট জনাব আন্দালীব বিন হক।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ই-জিপির মাধ্যমে আহ্বানকৃত দরপত্রের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৬৪টি। এসব দরপত্রের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ লক্ষ ৫২১ কোটি টাকা। ই-জিপি সিস্টেম থেকে এ পর্যন্ত আয় ২৩৫৪ কোটি টাকা। ই-জিপিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ১ লক্ষ ১১ হাজার ১৭৮ জন। দেশের ৫২টি ব্যাংকে ই-জিপি সিস্টেমে যুক্ত রয়েছে। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৬৯৯০টি শাখা দরদাতাদের পেমেন্ট সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন মিডিয়ার ৩০ জন প্রতিনিধি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ষ্টাফ রিপোর্টার জনাব হামিদ উজ জামান কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিকগণ সিটিজেন পোর্টালকে আরও কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত ব্যক্ত করেন। আইএমইডি সচিব ও বিপিপি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসব পরামর্শ বিবেচনার কথা উল্লেখ করেন।

কর্মশালায় বলা হয়, সরকারের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সরকারি ক্রয়ে ব্যয়ের পরিমাণ। বর্তমানে জাতীয় বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৮০ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে সরকারি ক্রয়ে। বড় অঙ্কের এই ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে নাগরিক সম্পৃক্ততা।  নাগরিকদের এ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে ‘সরকারি ক্রয় বাতায়ন’ নামে সিটিজেন পোর্টাল চালু করেছে বিপিপিএ (পূর্বতন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট-সিপিটিইউ)

স্বাগত বক্তব্যে বিপিপিএর পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মির্জা আশফাকুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সরকারি ক্রয়ে বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়ন করে আসছে বিপিপিএ (পূর্বতন সিপিটিইউ)। এসব সংস্কারের অন্যতম হলো সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশন বা ই-জিপি। সরকারি ক্রয় বাতায়ন নির্মাণ ও সবার জন্য তা উন্মুক্তকরণও সংস্কারের একটি অংশ। সরকার তার সব কাজেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দেশের ৪৮টি উপজেলায় নাগরিক দল গঠন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে সরকারি ক্রয় চুক্তির বাস্তবায়ন মনিটর করেছি। এতে আমরা আশানুরূপ ও ইতিবাচক ফল পেয়েছি। এখন সিটিজেন পোর্টালের মাধ্যমে আমরা নাগরিকদের সরকারি ক্রয় পর্যবেক্ষণে যুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইএমইডি সচিব জনাব আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, সাংবাদিকরাও সরকারি ক্রয়ের অংশীজন। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সরকারি ক্রয় বাতায়নের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সরকারি ক্রয় বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকের জন্য সহায়ক হবে। এটি সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত তথ্যের বড় একটি উৎস। তথ্য প্রদানের জন্যই এই সিটিজেন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। বিশ্বের খুব কম সংখ্যক দেশেই ক্রয় বিষয়ক এ ধরনের সিটিজেন পোর্টাল আছে।

বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: শোহেলের রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় ও গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় যুগান্তকারী নানা সংস্কার হয়েছে। এসব সংস্কার সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে এসব বিষয়ে জানতে বিপিপিএ (পূর্বতন সিপিটিইউ) পরিদর্শন করেছে।

তিনি বলেন, নাগরিকদের করের টাকায় ও তাদের জন্যই সরকারি ক্রয়এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে- তা জানার অধিকার রয়েছে প্রতিটি নাগরিকেরগোপনীয় ও স্পর্শকতার কিছু তথ্য ছাড়া ধীরে ধীরে সরকারি ক্রয়ের সব তথ্যই সরকারি ক্রয় বাতায়নে দেওয়া হবে। আগামীতে এ পোর্টালের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় বিষয়ে নাগরিকদের মতামত নেওয়ার উদ্যোগও থাকবে। এর ফলে দেশের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা আরও বেশি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে।

 

Publication Date : 01/01/2024