Public Procurement Reform

Public Procurement Reform in Bangladesh

20/09/2023 12:00 AM

সরকারি ক্রয়ে সংস্কার

সরকার সামগ্রিক খাতভিত্তিক সুশাসন নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০০২ সালে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে একটি স্থায়ী ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার নাম সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)এটি ক্রয় সংস্কার ও সংস্কার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কার্যকর ইউনিট হিসেবে কাজ করেছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে একটি সমন্বিত সরকারি ক্রয় প্রবিধান (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রেগুলেশন ২০০৩) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এ ছাড়া, পিপিআর ২০০৩ এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া ও অনুমোদন পদ্ধতি (PPPA), আর্থিক ক্ষমতার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন (DoFP) এবং বিভিন্ন আদর্শ দরপত্র দলিল (STD) প্রণীত হয়েছে।

২০০৬ সালে সরকারি ক্রয় আইন (পাবলিক প্রকিউমেন্ট আইন, ২০০৬, PPA) জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং ২০০৮ সালে সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পাবলিক প্রকিউমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮, PPR) জারি করে উভয়টি ২০০৮ সালে যুগপৎ কার্যকর করা হয়েছে।


কান্ট্রি প্রকিউরমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট (সিপিএআর) এবং সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রকল্প (পিপিআরপি)

বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে  ধীর গতির কারণে ২০০১ সালে বিদ্যমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা, কাঠামো, প্রতিষ্ঠান ও জনবলের দক্ষতার উপর একটি মূল্যায়ন পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সহযোগিতায় কান্ট্রি প্রকিউরমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট (সিপিআর) তৈরির উদ্যোগ নেয়। এই রিপোর্টে ক্রয় ব্যবস্থার বেশ কিছু ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সুষ্ঠু আইনি কাঠামোর অনুপস্থিতি
  • জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া
  • পরিকল্পনার অভাব
  • অনুমোদন প্রক্রিয়ার একাধিক স্তর
  • জনবল প্রশিক্ষণের অভাব
  • দরপত্র ও দর মূল্যায়নের মানহীনতা
  • চুক্তি বাস্তবায়নে অদক্ষতা
  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব

এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০০২ সালে গৃহীত হয় প্রথম সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রকল্প (পিপিআরপি)।


সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রকল্পের মূল কার্যক্রম

প্রথম প্রকল্প (২০০২-২০০৭) এর আওতায় সরকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ২০০৩ সালে সরকারি ক্রয় প্রবিধান (পিপিআর) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
  • একটি বিশেষায়িত ইউনিট (সিপিটিইউ) প্রতিষ্ঠা।
  • সরকারি ক্রয়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করা।
  • প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (PROMIS) এর উন্নয়ন।
  • ১৮০০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান।
  • আদর্শ দরপত্র দলিল প্রণয়ন।
  • পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ পাস।

সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রকল্প ২ (PPRP-II)

সরকারি ক্রয় সংস্কার আরও জোরদার করতে ২০০৮ সালে সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রকল্প ২ (PPRP-II) চালু হয়। এটি চারটি প্রধান কম্পোনেন্টে বিভক্ত ছিল:

১।নীতিমালা সংস্কার ও দক্ষতা উন্নয়ন

২।খাতভিত্তিক ক্রয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন

৩।ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) প্রবর্তন

৪।যোগাযোগ, আচরণগত পরিবর্তন ও সামাজিক জবাবদিহিতা

PPRP-II ২০১৭ সালের ৩০ জুন সাফল্যের সাথে শেষ হয়। বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত পর্যালোচনা মিশন অনুযায়ী এ প্রকল্পের অর্জন ছিল সন্তোষজনক। প্রকল্পের সমাপান্তে এর পাচঁটি প্রধান উদ্দেশ্যের সবগুলোই পূরণ হয়েছে। এরমধ্যে চারটিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী অর্জন হয়েছে। এসব সাফল্য বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় পরিবেশে পদ্ধতিগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।


ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্ট (DIMAPPP)

২০১৭ সালে শুরু হওয়া DIMAPPP প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা আরও ডিজিটালাইজড করা হয়। এর আওতায় সেবা কার্যক্রম গৃহীত হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ই-জিপি সিস্টেমের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ
  • সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান
  • নাগরিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা
  • প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের জন্য ইলেকট্রনিক মনিটরিং ব্যবস্থা (e-PMIS) চালু।

এ প্রকল্পের চারটি কম্পোনেন্ট। এগুলো হলো সিপিটিইউ’র পূণর্গঠন ও নীতি সংস্কার, সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশনের সম্প্রসারণ, ক্রয়ে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি ও নাগরিক সংশ্লিষ্টতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের ডিজিটাইজেশন।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

DIMAPPP এর অতিরিক্ত অর্থায়ন
DIMAPPP এর অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক বোর্ড এই অতিরিক্ত অর্থায়ন অনুমোদন করে। এর আওতায়

  • বিশ্বব্যাংক আইডিএ দেয় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) থেকে আসে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • অতিরিক্ত অর্থায়নের মেয়াদ ছিল জুলাই ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত।

অতিরিক্ত অর্থায়নের যৌক্তিকতা
অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:

১. কোভিড-১৯ অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে ই-জিপি এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের পরিসর এবং বৈশিষ্ট্যের বিস্তৃতি।

২. মূল প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রকল্পের মেয়াদ ও সম্পদের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় দেড় বছর মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যয় নির্বাহ।

৩. ২০২০ সালে সরকার এবং বিশ্বব্যাংকে যৌথভাবে তৈরি করা MAPS (Methodology for Assessing Procurement System) সুপারিশগুলো ক্রয় আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।

প্রকল্পের অগ্রগতি (নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত)


জুলাই ২০১৭ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি
জুলাই ২০১৭ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত নির্ধারিত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিশ্বব্যাংক ডিআইএমএপিপিপিকে (DIMAPPP) সবচেয়ে উদ্ভাবনী, অংশীদারিত্বমূলক এবং প্রভাবশালী প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত, COVID-19 অতিমারির প্রভাব সত্ত্বেও প্রকল্পটি নিম্নোক্ত উপাদানগুলোর আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ই-জিপি সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে সচল ছিল।

১. সিপিটিইউ পুনর্গঠন ও নীতিমালা সংস্কার:

  • সিপিটিইউ-এর রূপান্তর: ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পূর্বতন সিপিটিইউকে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) তে রূপান্তর করা হয়।
  • এসপিপি নীতিমালা ও নির্দেশিকা: টেকসই সরকারি ক্রয় (এসপিপি) নীতিমালা ২০২৩ সালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং ২০২৪ সালে এসপিপি নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়।
  • সরকারি সম্পত্তি নিষ্পত্তিকরণ নীতিমালা: একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

২. সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশন সম্প্রসারণ:

  • ২৮টি ন্যাশনাল স্পেশালাইজড প্রকিউরমেন্ট সাপোর্ট অফিসের (NSPSOs) এর ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ক্রয় সম্পন্ন ও প্রদান করা হয়েছে।
  • ই-জিপি প্রশিক্ষণ:
    • ডিআইএমএপিপিপি প্রকল্প চলাকালে ৩৩,০৫৮ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।
    • ২০১১ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৪১,৬৯৭ জন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
    • ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ছিল ১,১৮,০৮৪ এবং আ্হ্বানকৃত দরপত্রের সংখ্যা ৮,৬৮,০৯৩, যার মোট মূল্য ১০৭.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য।
  • ই-জিপি উন্নয়ন:
    • আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র মডিউল ই-জিপি’তে যুক্ত করা হয়েছে।
    • e-GP সিস্টেম IBASS++, NID এবং e-PMIS-এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে।
    • ই-অডিট মডিউল ‍যুক্ত করা হয়েছে।
    • টেন্ডারার ডাটাবেজ চালু করা হয়েছে।
    • ই-সিএমএস চালূ করা হয়েছে।
    • ই-জিপি’তে সেবা, ক্রয় ও ফ্রেমওর্য়াক এগ্রিমেন্ট যুক্ত করা হয়েছে।

৩. সরকারি ক্রয়ে পেশাদারিত্ব ও নাগরিক সম্পৃক্ততা:

  • প্রশিক্ষণ:
    • ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণে ৩৪৮৪ জন অংশগ্রহণ করেছেন।
    • ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণে ৪৩৩৩ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
  • সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
  • নাগরিক সম্পৃক্ততা:
    • নাগরিকদের সরকারি ক্রয়ের তথ্য জানাতে ২০২০ সালে "সরকারি ক্রয় বাতায়ন" চালু করা হয়েছে।
    • ৪৮টি উপজেলায় ৩১৬টি সরকারি ক্রয় চুক্তি পর্যবেক্ষণ করেছে ২৫৪টি নাগরিক দল।
    • নাগরিকদের মাধ্যমে ৪৪৩টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে ৪০৯টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

৪. প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের ডিজিটালাইজেশন:

  • ই-পিএমআইএস:
    • ২০২১ সালে e-PMIS সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
    • ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২৬৮ জন প্রকল্প পরিচালক e-PMIS-এ নিবন্ধিত হয়েছে।
    • প্রকল্পটিতে রিয়েল-টাইম ডেটা প্রদান কার্যক্রম চালু রয়েছে।

সরকারি ক্রয় সংস্কারের ফলাফল (নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত):

  • স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: ২০০৭ সালে ৭০% দরপত্র প্রকাশ করা হতো, যা এখন ১০০%।
  • দক্ষতা বৃদ্ধি: ২০০৭ সালে দরপত্রে প্রাথমিক বৈধতা মেয়াদে ১০% চুক্তি প্রদান করা হতো, যা এখন ৯৯.৬৭%।
  • সময় সাশ্রয়: ২০১২ অর্থবছরে সরকারি ক্রয়ের লিড টাইম গড়ে ৮৬.৭ দিন থেকে ২০২৪ সালে ৫৩ দিনে নেমে এসেছে।
  • প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: প্রতি দরপত্রে গড় দরপত্রদাতা ২০০৭ সালে ছিল ৩ জন, যা এখন ২০.০৪ জন।
  • পরিবেশগত প্রভাব:
    • ১.০৫৩ বিলিয়ন পৃষ্ঠার কাগজ সাশ্রয়।
    • ৪৯৭ মিলিয়ন কিলোমিটার ভ্রমণ হ্রাস।
    • ১৫৩,৫৫৯ টন CO নির্গমন কমানো।

ই-জিপি সিস্টেম বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়ে খাতে স্বচ্ছতা, দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে এবং পরিবেশবান্ধব পরিবর্তন এনেছে।