News

Title : সরকারি ক্রয়ের মানোন্নয়নে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ
Description :

সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সরকারি ক্রয়ে প্রক্রিয়াগত সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এটি সরকারি ক্রয়ে সঠিক মূল্য ও মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের ‘অর্থের অর্থমূল্য’ অর্জনেও সহায়ক হবে। এজন্য সরকারি ক্রয়ের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সুশাসন ও সরকারি কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অর্থের অর্থমূল্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনও যথাযথভাবে অনুসরণ করত হবে কর্মকর্তাদের।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রাজধানীতে বিশ্বব্যাংক ও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ‘জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে সরকারি ক্রয়ে অর্থের অর্থমূল্য নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারেন’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব জনাব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, এনডিসি এবং বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভূটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিজ মার্সি মিয়াং টেমবন।

সিপিটিইউ এর পরিচালক (সমন্বয় ও প্রশিক্ষণ) জনাব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের লিড প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট রিচার্ড ওলোয়ে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের লিড প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট রিচার্ড ওলোয়ে। অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালণের জন্য সরকারি ক্রয়ে সংশ্লিষ্টসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের অর্থ ব্যবহার করে সরকারি ক্রয়কাজ হয়। তাই জনগণের অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে দেশপ্রেমের অনুভূতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, “সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে। জনগণ জানতে চায় কতটা কার্যকরভাবে তাদের অর্থ খরচ করা হয়। তাই আমাদেরকে ক্রয় আইন মেনে, দেশপ্রেমের চেতনা নিয়ে ও বিবেকবান হয়ে কাজ করতে হবে।” পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “সরকারি ক্রয় সঠিক সময়ে ও সঠিক মান বজায় রেখে করতে হবে। আর এটি করা গেলে প্রকল্প বাস্তবায়নও ভালো হবে।”

আইএমইডি সচিব বলেন, প্রতিবছর জাতীয় বাজেট ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির আকার বাড়ছে। সেই সাথে সরকারি ক্রয়েও বরাদ্দ বাড়ছে। বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকার জাতীয় বাজেটের ৪৫ শতাংশ ব্যয় করে সরকারি ক্রয়ে। আর এডিপির ৭৫ শতাংশই সরকারি ক্রয়ে ব্যয় হয়। যা বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ‍দুইটি প্রধান বাধা হচ্ছে- সঠিক সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়কাজ না করা। ডিপিপির ক্ষেত্রে সঠিক সময় অনুসরণের তাগিদ দেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ই-জিপির প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় সংস্কারে অংশীদার হতে পেরে বিশ্বব্যাংক গর্বিত। জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্কারের ফলে বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এর ফলে প্রতিবছর ১৫০ মিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় হচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে দেড় হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক অথবা তিন হাজারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা সম্ভব।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সুনীল কে ভট্টাচার্যের উপস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সুনীল আগাম ক্রয় প্রস্তুতির বিষয়ে কথা বলেন। অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয়ে সঠিক সময় অনুসরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সুনীলের মতে, ডিপিপি চূড়ান্ত করার পর টিওআর পরিবর্তন করা কঠিন। তবে একজন বক্তা উল্লেখ করেন, সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত করা গেলে এটি সম্ভব। এছাড়া উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০ শতাংশ বেশি বা কম হলে দরপ্রস্তাব বাতিল হওয়া, মাইলস্টোনভিত্তিক লিকুইডেটেড ডেমেজ, প্রক্রিয়া ও জ্ঞানভিত্তিক সরকারি ক্রয়, উন্নয়ন সহযোগীদের কারণে কাজে বিলম্ব, যৌথ অর্থায়নের সমস্যা, যখন তখন আদালতের আশ্রয় নেয়া, সরকারি ক্রয় আইনজীবীর স্বল্পতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় ওঠে আসে।

বক্তারা বলেন, সরকারি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ব্যবহার, গুণগত মান বজায় রেখে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার বিষয়টি নির্ভর করে সরকারি ক্রয় পদ্ধতি কতটা ভালোভাবে কার্যকর করা হচ্ছে তার ওপর। তারা বলেন, সরকারি ক্রয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার পদ্ধতিগত নানা সংস্কার করে আসছে। এসব সংস্কারের একটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি)। এটি সরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে সহায়ক হয়েছে। 

Publication Date : 20/02/2020