সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধে সঠিক ক্রয় নিরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নিরীক্ষা কর্মকর্তাদের সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রি-অডিট চালুর দাবি এবং অডিট কর্মকর্তাদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার জোরালো আহ্বানের মধ্য দিয়ে এসব মন্তব্য উঠে এসেছে "সরকারি ক্রয়, ই-জিপি ও ই-অডিট" শীর্ষক এক কর্মশালায়।

এ কর্মশালাটি ২৮ মে ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)-এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্ট (ডিম্যাপ)-এর আওতায় সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিপিপিএ এ কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে বিসিএস নিরীক্ষা এবং হিসাব ক্যাডারের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

ইলেকট্রনিক কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ই-সিএমএস) সংযোজনের মাধ্যমে বিপিপিএ'র ই-জিপি একটি পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সিস্টেম হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।

এ সিস্টেমটি আরও কার্যকর হয়েছে কারণ এতে সংযোজন করা হয়েছে ই-অডিট মডিউল, টেন্ডারার্স ডাটাবেইস, আন্তর্জাতিক দরপত্র মডিউল ইত্যাদি। এছাড়া iBAS++ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সিস্টেমের সাথেও ই-জিপির আন্ত:সংযোগ করা হয়েছে।

নিরীক্ষা কর্মকর্তারা জানান, ই-জিপির মাধ্যমে ই-অডিটের সুবিধা ব্যবহার করে তারা এখন অনলাইনের মাধ্যমে নিরীক্ষা করতে পারছেন। ফলে তাদেরেক ক্রয়কারীর অফিসে যেতে হচ্ছে না এবং প্রচুর কাগজপত্রও বহন করতে হচ্ছে না।

বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মির্জা আশফাকুর রহমান কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরেন এইডেড প্রজেক্ট অডিট ডিরেক্টরেট (FAPAD)-এর মহাপরিচালক নুরুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপিপিএ'র সাবেক সিইও মোহাম্মদ শোহেলের রাহমান চৌধুরী।

ডোহাটেক নিউ মিডিয়ার ‘ই-জিপি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি’ দলের দলনেতা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া ই-অডিট ও এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

বিপিপিএর সিইও তাঁর পৃথক উপস্থাপনায় সরকারি ক্রয়ের আইনি দিকগুলো তুলে ধরেন এবং কোথায় নিরীক্ষা অপরিহার্য, আবার কোথায় নিরীক্ষা কর্মকর্তারা ভুল বুঝে নিরীক্ষা করেন—তা ব্যাখ্যা করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্হায় কর্মরত বিসিএস নিরীক্ষা এবং হিসাব ক্যাডারের প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

বিপিপিএর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালাটির ব্যবস্হাপনা করেছে বিপিপিএর যোগাযোগ পরামর্শক বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস (বিসিসিপি) ।

নিরীক্ষারা সরকারি অর্থের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন উল্লেখ করে বিপিপিএ'র সিইও বলেন, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিপিপিএ নিরলসভাবে কাজ করছে এবং নিরীক্ষা কর্মকর্তারা এ লক্ষ্য অর্জনে অনেক সাহায্য করতে পারেন।

বিপিপিএ (পূর্বতন সিপিটিইউ) এর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ই-জিপির  ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেওয়ার জন্য বিপিপিএ কাজ করছে এবং আগামী পাঁচ বছরে ৯০ শতাংশ সরকারি ক্রয় ই-জিপির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারি অর্থের অপচয় রোধে কাজ করতে নিরীক্ষা কর্মকর্তাদের আরো প্রশিক্ষণের আহ্বান জানিয়ে এফএপিএডি-এর মহাপরিচালক  জনাব নুরুল ইসলাম বলেন, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত অডিটর ছাড়া সরকারি ক্রয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিপিপিএ'র সাবেক সিইও নিরীক্ষা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে সিএজি কার্যালয়কে অনুরোধ করেন, যাতে তারা বিপিপিএকে নিরীক্ষা কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরবরাহ করে।

এতে নিরীক্ষা কর্মকর্তারা সরকারি ক্রয়, ই-জিপি ও ই-অডিট আরও ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।