News
Title | : | সরকারি ক্রয় সংস্কারে জোর দিচ্ছে সরকার |
---|---|---|
Description | : |
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়ে বার্ষিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। এই বিশাল ব্যয়ে কোন অপচয় যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের যথাযথ ও সময়োপযোগী বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫০০ প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদি এই প্রকল্পগুলির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)-এর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জনাব মো. মাহফুজার রহমান ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ভোলায় বিপিপিএ-এর কার্যাবলী ও ই-জিপি বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন। বিপিপিএ’র আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. আজাদ জাহান। বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস (বিসিসিপি) কর্মশালার ব্যবস্থাপনা করে। কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন ক্রয়কারী কার্যালয়ের প্রতিনিধি, ব্যাংক প্রতিনিধি, দরপত্রদাতা, সাংবাদিক ও বিসিসিপি’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জনাব মোঃ মাহফুজার রহমান বলেন, “বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে সংস্কার ও স্বচ্ছতার ওপর জোর দিচ্ছে। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম সংস্কার হলো সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশন বা ই-জিপি। বর্তমানে, প্রায় ৬৫ শতাংশ সরকারি ক্রয় ই-জিপির মাধ্যমে করা হচ্ছে। আমাদের এটি ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।“ তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ই-জিপি সিস্টেম ইতিমধ্যেই দেশে ও বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি দেশ এবং ৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের ই-জিপি সিস্টেম এবং এর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করেছে। ই-সিএমএস চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে সরেজমিনে চুক্তি বাস্তবায়নের তথ্য অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এটি ই-জিপি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত। দরদাতাদের অর্থ সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়াও, ই-অডিট চালু করা হয়েছে। অনলাইনে দরদাতাদের জমা দেওয়া আর্থিক বিবরণী যাচাই করার জন্য ই-জিপিকে ডিভিএস সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করার কাজ চলছে। ই-জিপির বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ৭০ শতাংশ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব ছিল, যা ২০২৪ সালে ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭ সালে দরপত্র বৈধতার প্রাথমিক সময়ের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল, যা ২০২৪ সালে ৯৬.৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রতিটি দরপত্রের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য দরপত্রের গড় সংখ্যা মাত্র ৩ থেকে বেড়ে ১০.৬৮ হয়েছে। “চরফ্যাশনে সরকারি ক্রয় বিষয়ক সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত” সরকারি ক্রয়ে অংশীজন অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বিষয়ে আলোচনা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার দূরে ভোলা জেলার প্রত্যন্ত উপকূলীয় উপজেলা চরফ্যাশনে সচেতনতা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা আয়োজন বিপিপিএ’র প্রচেষ্টাকে আরও বাড়িয়েছে। ৪০ জন প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এর আগে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিপিপিএ একটি সভা আয়োজন করে। বিপিপিএ’র এই উদ্যোগে দেশে অর্থপূর্ণ আলোচনায় দরপত্রদাতা ও ক্রয়কারী উভয়কেই একত্রিত করে আরও অংশগ্রহণমূলক ক্রয় পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য চলমান প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। বিপিপিএ-র বর্তমান কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসাবে উপজেলা-স্তরে একইরকম বেশ কয়েকটি সভার আয়োজন করা হবে। চরফ্যাশনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপিপিএ-এর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জনাব মো. মাহফুজার রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (উপসচিব) জনাব মো. সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিস রাসনা শারমিন শিথি। রাজধানী থেকে বহুদূরে এই ধরনের সভা আয়োজনের মাধ্যমে বিপিপিএ সকল স্তরের সরকারি ক্রয় অংশীজনের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সুশাসন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দিচ্ছে। সরকারি ক্রয়ে ই-জিপির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে উল্লেখ করে জনাব মো. মাহফুজার রহমান বলেন, সকল ক্রয়কারীকেই ই-জিপিতে টেন্ডার করতে হবে। সে কারণে দরদাতাসহ ক্রয়কার্যে যুক্ত সকলেরই ই-জিপি সিস্টেম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। দরদাতাগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সরকারি ক্রয়চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক্রয়কারীর ন্যায় আপনারাও সমান অংশীদার। এজন্য আপনারা সরকারের উন্নয়ন সহযোগী। ক্রয়কারীর সঙ্গে আপনারাও ই-জিপির বাস্তবায়নকারী। তাই আপনারা মাঠ পর্যায়ের বিষয়গুলো ভালো জানেন। সেসব জেনে ই-জিপিকে সময়োপযোগী রাখতে বিপিপিএ তৎপর। অনেক সময় ব্যাংকের মাধ্যমে দরপত্রদাতাগণ তাদের জমাকৃত দরপত্র জামানত ফিরে পেতে সমস্যায় পড়েন। এ সমস্যা নিরসনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি “ নিজের টেন্ডার নিজেকেই অনলাইনে জমা দিতে জানতে হবে উল্লেখ করে তিনি দরদাতাদের সতর্ক করে বলেন, “দোকানে পাসওয়ার্ড দিয়ে অন্যের মাধ্যমে টেন্ডার জমা দেওয়া এক বিরাট ঝুঁকির কাজ। এই ঝুঁকি আপনারা কেন নিবেন? ২৪ ঘণ্টাই আপনাদের সহায়তার জন্য আমাদের ই-জিপি হেল্প ডেস্ক রয়েছে। ১৬৫৭৫-এ কল করে ই-জিপি সংক্রান্ত সহায়তা নিতে পারেন।” উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ই-জিপির সুফল অনেক। এর ফলে আমাদের অনেক বাড়তি কাজ কমে গেছে। বিপিপিএ-এর অন্যতম অগ্রাধিকার সরকারি ক্রয়কাজে ই-জিপি’র ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা আনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বিপিপিএ যথেষ্ট ভালো কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, “যেহেতু ই-জিপি’র উত্তরণ চলমান প্রক্রিয়া যার জন্য নতুন ফিচার বা মডিউল যুক্ত করে এর উৎকর্ষ আনা হচ্ছে, সেসবের সঙ্গে সকলকে পরিচিত করা এবং ব্যবহারে উৎসাহিত করা জরুরি। সেইসাথে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়াও অতি আবশ্যক। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে ক্রয়চুক্তি বাস্তবায়নে এবং সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ প্রতিপালন ও ই-জিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকলের অভিজ্ঞতা ও মতামত জানাও এই সিস্টেমকে ব্যবহারোপযোগী করার জন্য জরুরি। সে লক্ষ্যেই আজকের এই কর্মশালা।”
|
Publication Date | : | 16/04/2025 |