News

Title : সরকারি ক্রয় আধুনিকীকরণে গুরুত্বারোপ
Description :

সরকার ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-জিপি সিস্টেম আধুনিকীকরণে অগ্রাধিকার দিয়েছে। শীঘ্রই সরকারি ক্রয় আইনেও প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি)-এর বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)- এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জনাব মির্জা আশফাকুর রহমান, "বিপিপিএ কার্যাবলী ও ই-জিপি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময়" শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন।

৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মৌলভীবাজার জেলার ডিসি অফিসের সম্মেলন কক্ষে বিপিপিএ এ কর্মশালা আয়োজন করে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. ইসরাইল হোসেন কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব বুলবুল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস (বিসিসিপি) কর্মশালাটি পরিচালনা করে। বিসিসিপির ডেপুটি সিইও এবং প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. জিনাত সুলতানা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়  ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, দরপত্রদাতা, সাংবাদিক, ব্যাংকার এবং সুশীল সমাজের সদস্যসহ মোট ৭০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।

বিপিপিএ-র উদ্দেশ্য উল্লেখ করে জনাব মির্জা আশফাকুর রহমান বলেন, বিপিপিএ বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সরকারি ক্রয় আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তোলার জন্য তৃণমূল স্তরের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করতে কর্মশালা আয়োজন করছে। তিনি ই-জিপিকে অধিকতর কার্যকর করার জন্য ই-জিপির সংস্কার আনার বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বর্তমান অনুকূল পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ই-জিপি ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে অত্যন্ত আন্তরিক ও তৎপর।”আমরা এমন একটি সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যা আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব হবে। তাই আমাদের অগ্রাধিকার এখন ইতিবাচক পরিবর্তন আনা কারণ এটিই সঠিক সময়,” বলেন বিপিপিএ প্রধান ।

বর্তমানে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে, কিন্তু সমাপ্তির পরে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও তহবিল বরাদ্দ করা হয় না উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্টদের, বিশেষ করে ক্রয়কারী সংস্থাগুলিকে যেকোনো কাজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তহবিল চাওয়ার পরামর্শ দেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজের মান নিশ্চিত করার জন্য পারফরমেন্স গ্যারান্টি  বাড়ানো যেতে পারে কিনা তা বিপিপিএ বিবেচনা করবে, তবে এটি দরপত্রদাতাদের উপর বোঝা হতে পারে। কারণ এ তহবিলটি দীর্ঘ সময়  আটকে থাকে।

সরকারি ক্রয় আইনে আসন্ন সংশোধনীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আর কাজ বিক্রি করার কোনও সুযোগ থাকবে না। কারণ আইন ও বিধি থেকে ১০ শতাংশের যে মূল্যসীমা তার বিধান বাদ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জনগণকে কাজের ক্ষেত্রে কোন ফাঁকফোকর দেখলে তা অবহিত করা এবং প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “সময় এখন পরিবর্তিত হয়েছে, তাই ভয় পাওয়ার বা দুর্বল বোধ করার কোনও কারণ নেই।”

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ৭,৯৯,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ সরকারি ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ  উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি ক্রয়ের ৬৫ শতাংশ ই-জিপির মাধ্যমে করা হয়। এত বিশাল বাজেট ই-জিপির মাধ্যমে ব্যয় করা হয় তা বিবেচনা করে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ই-জিপিতে প্রশিক্ষণ নেয়া অপরিহার্য বলে জোর দেন।

৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিপিপিএ প্রথমবারের মতো ই-জিপি বিষয়ক একটি ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচির আয়োজন করে যা স্থানীয় দরপত্রদাতাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করে। মোট ৩৫ জন দরপত্রদাতা এ ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও কার্যকর বলে তারা অভিহিত করেন।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি) এর ব্যবস্থাপনায় ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচি সকালে বিপিপিএ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা আশফাকুর রহমানের ই-জিপি বিষয়ক সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়, যিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলার বিভিন্ন ক্রয়কারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পর্যায়ের দরপত্রদাতাদের জন্য পরবর্তী ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে চরফ্যাসন উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে। দোহাটেকের সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এ.এস.এম. শরিফুল হক, শ্রীমঙ্গলে বিপিপিএ-এর পক্ষে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

ই-জিপি সিস্টেমের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, একজন নারী দরপত্রদাতা হেলেনা চৌধুরি বলেন, এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে তিনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। "আগে আমি সম্পূর্ণরূপে অন্যদের উপর নির্ভরশীল ছিলাম এবং দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাদের সাহায্য নিতাম যা প্রায়শই আমার জন্য অসুবিধাজনক ছিল। কিন্তু এখন আমি নিজেই কাজটি সম্পাদন করতে সক্ষম হব," তিনি উল্লেখ করেন।

যেহেতু এখন সবকিছু অনলাইনে করতে হয়, তাই ই-জিপি ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ পাওয়া আমার জন্য একটি বড় অর্জন, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একজন মহিলা দরপত্রদাতা হিসেবে ই-জিপির মাধ্যমে টেন্ডারিং ব্যবসায় অংশ নেয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে, কারণ এখন সমস্ত কাজই  এখন ঘরে বসে করা সম্ভব।

পূর্বে ই-জিপিতে কাজ করা ভয়ের বিষয় ছিল কিন্তু আজকের ওরিয়েন্টেশনের পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এবং আমি আরও সুচারুরূপে কাজ করতে পারব। যেকোনো অসুবিধার ক্ষেত্রে ই-জিপি হেল্প ডেস্কের সাহায্য নিতে পাররো, যা আজকের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে শেখানো হয়েছে, তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সহায়তা পেতে নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বিপিপিএ-র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরেক দরদাতা দেলোয়ার হোসেন বলেন যে তিনি আগে কম্পিউটার দোকানে দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য যেতেন যেখানে তাকে পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে হত কারণ তিনি নিজে এটি করতে পারতেন না। এখন তিনি মনে করেন, এই ওরিয়েন্টেশন থেকে যে শিক্ষা পেয়েছেন তাতে তিনি নিজেই এখন এটি করতে পারবেন।

Publication Date : 10/04/2025