২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সিলেট সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কার্যক্রমে নাগরিক সম্পৃক্ততা বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালা আয়োজন করে।  সরকারি ক্রয়কাজে নাগরিক সম্পৃক্ততা, মাঠ পর্যায়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণের পরামর্শগ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমই বিভাগের সচিব আবুল মনসুর মো: ফয়েজউল্লাহ, এনডিসি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মনসুর মো: ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের অর্থে সরকার ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে।  তাই সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের ভূমিকা রয়েছে।  ক্রয় কার্যক্রম কতটা স্বচ্ছ ও দক্ষ এটা জানা তাদের অধিকারও বটে। সরকারি ক্রয়ের গুরুত্ব ও আকার দুই ই বেড়েছে। এটা বাড়তেই থাকবে। সরকার তাই স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।  নাগরিকদের এসব বিষয়ে তথ্য প্রদান, তাদের মতামত জানার মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিপিটিইউ মহাপরিচালক মো. আলী নূর বলেন, ‘সিপিটিইউ ২০০২ থেকে সরকারি ক্রয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে। ২০১১ তে আমরা ই-জিপি শুরু করেছি।  আমরা শুধুমাত্র ডিজিটাইজেশন এ আমাদের সংস্কার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখিনি। একই সাথে ক্রয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নাগরিক সংশ্লিষ্টতার কাজও হাতে নিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।  সিপিটিইউ-এর পরিচালক শীষ হায়দার চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের পর সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততা ও কর্মশালার পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন  ব্র্যাক ইন্সটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) টিম লিডার ড. মির্জা হাসান।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।

কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে  বর্তমান ক্রয় প্রক্রিয়ার সুবিধা ও অসুবিধা, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততার বর্তমান কর্মকৌশল: নাগরিকদের মতামত, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিক অংশগ্রহণের টেকসই কৌশল: জনগণ, সরকার এবং ঠিকাদারদের করণীয় বিষয়ে দলীয় কাজ ও উপস্থাপনায় অংশ নেন অংশগ্রহণকারীরা।  সরকারি ক্রয়কারী অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ, টেন্ডারার, সুশীল সমাজ ও গনমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দসহ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) “Digitizing Implementation Monitoring and Public Procurement Project (DIMAPPP)” এর আওতায় দেশের ৪৮টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সরকারি ক্রয়কার্যের বাস্তবায়নে স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কাজ করছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এ কাজের জন্য সিপিটিইউ-র পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বিআইজিডি সরকারি ক্রয়ে নাগরিক সংশ্লিষ্টতা আনয়নের উপায় নির্ধারনের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন যোগ্য একটি কৌশল প্রনয়ণ এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারি ক্রয়ের বাস্তবায়ন স্থানীয় নাগরিকদের মাধ্যমে মনিটরিং-এ সহায়তা করছে।

বিআইজিডি সরকারি ক্রয়কাজে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন একটি কৌশল ব্যবহার করতে চায় যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে মানানসই, টেকসই এবং বাস্তবায়নের ব্যয় যৎসামান্য। বিআইজিডি সাইট- স্পেসিফিক বা কন্ট্রাক্টভিত্তিক নাগরিক সম্পৃক্ততার ধারণাটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছে যা প্রথম বছরে ১২টি এবং আগামী বছরে আরও ৩৬ টি উপজেলায় চালু থাকবে।  ব্র্যাক-এর কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম (সিইপি) এই কাজে মাঠ পর্যায়ে বিআইজিডিকে সাহায্য করছে।

বিআইজিডি সরকারি ক্রয়কাজে নাগরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে দুইটি ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি মাঠপর্যায়ে একই সাথে বাস্তবায়ন করছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মাঠলব্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সবচেয়ে কার্যকর পন্থাটি খুঁজে বের করা। বেশির ভাগ উপজেলাতে প্রতিটি কাজের সাইটে আশেপাশের লোকজনদের নিয়ে একটি নাগরিক গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে যাদের দায়িত্ব হচ্ছে ওই কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষন করা এবং কোন অনিয়ম দেখলে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে জানানো।  এই গ্রুপটি নাগরিক পর্যবেক্ষক নামে পরিচিত।  অন্যদিকে, কয়েকটি সাইটে কোন গ্রুপ না রেখে কাজ পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব স্থানীয় লোকজনের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ।